নবারুণ ভট্টাচার্য ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক প্রথাবিরোধী বিপ্লবী লেখক।

নবারুণ ভট্টাচার্য (জুন ২৩, ১৯৪৮ – জুলাই ৩১, ২০১৪) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক প্রথাবিরোধী বিপ্লবী লেখক। বিখ্যাত নাট্যকার-অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্য এবং সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর একমাত্র সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্য ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্মেছিলেন। পড়াশোনা করেছেন কলকাতার বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে এবং আশুতোষ কলেজে প্রথমে ভূতত্ত্ব নিয়ে ও পরে সিটি কলেজে ইংরেজি নিয়ে |
কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক, এই তিনটি পরিচয়ের মিশেলে নবারুণ গড়ে তুলছিলেন স্বকীয় একটি ধারা। নাটক করেছেন কলকাতার মঞ্চে। বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী নবারুণ দীর্ঘদিন কাজ করেছেন 'সোভিয়েত দেশ' পত্রিকায়। 'এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না'-এর মতো কবিতার পংক্তি কিংবা 'হার্টবার্ট', 'কাঙাল মালসাট'-এর মতো তীর্যক উপন্যাস গড়ে তুলেছে নবারুণের প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভাবমূর্তি। ব্যক্তি জীবনেও তিনি ছিলেন অনাড়ম্বর।
১৯৯৩ সালে নবারুণের 'হারবার্ট' উপন্যাসটি ভীষণ আলোড়ন তোলে। এই উপন্যাসের জন্য সে বছর সাহিত্য অকাদেমি সম্মানও পান তিনি। এছাড়াও পেয়েছেন নরসিংহ দাস (১৯৯৪), বঙ্কিম(১৯৯৬) পুরস্কার | পরবর্তী সময়ে এই উপন্যাস নিয়ে একই নামে সিনেমাও বানিয়েছেন সুমন মুখোপাধ্যায়। সুমন অবশ্য নবারুণের রচনা অবলম্বনে 'মহানগর কলকাতা' এবং 'কাঙাল মালসাট' নামে আরও দু’টি সিনেমা নির্মাণ করেন। সুমন এবং দেবেশ চট্টোপাধ্যায়রা নবারুণের লেখা থেকে আলোচিত কয়েকটি মঞ্চনাটকও করেছেন।
মানুষের পরাজয়, দুর্ভোগ আর তারই হাত ধরে মৃত্যু এবং আত্মহত্যার একের পর এক আলেখ্য নবারুণ এঁকেছেন তাঁর কবিতায়—পাশাপাশি গল্পে বা উপন্যাসেও। দারিদ্রসীমার নীচে থাকা অগণিত মানুষ; যারা সর্বহারা মানুষ—তাদের যাপনচিত্র, তাদের টিঁকে থাকার স্বপ্ন বা বেঁচে থাকার আশ্চর্য কৌশলগুলিও তাঁর কবিতা জুড়ে। শুধু মানুষ কেন, এই প্রাণমণ্ডলের উদ্ভিদ বা প্রাণী— যারা যেভাবে যেখানে বিপন্ন, নবারুণের সাহিত্য তাদেরই পক্ষে।
'কর্পোরেট সোসাল রেসপন্সিবিলিটি'র মতো সোনার পাথরবাটিকে প্রত্যাখ্যান করে তাঁর কবিতার সর্বহারা মানুষ। লুব্ধক উপন্যাসে শহরের কুকুরেরা অসহিষ্ণু মানুষদের ছেড়ে দল বেঁধে চলে যায়—যারা পরিবেশ-বান্ধব সেজে সেমিনার করে, তাদের!
এদের পাশে কি মধ্যবিত্তেরা রয়েছে? মানুষ ভুলে যাচ্ছে এদের হয়ে প্রতিবাদ করতে। বেশি সোচ্চার প্রতিবাদের ভাষাও যে এরকম সময়ে ভোঁতা মেরে যায়—নবারুণ তা জানেন। নবারুণের প্রতিবাদের কথাগুলি তাই গুপ্তঘাতকের ছুরির মতো।
নবারুণ ভট্টাচার্যের অন্যান্য রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'লুব্ধক', 'হালালঝান্ডা ও অন্যান্য', 'মহাজনের আয়না', 'ফ্যাতাড়ু', 'রাতের সার্কার্স' এবং 'আনাড়ির নারীজ্ঞান'। তাঁর মৃত্যুতে অসমাপ্ত থেকে গেছে ‘মবলগে নভেল’ উপন্যাসটি।
গ্রন্থতালিকা



কাব্যগ্রন্থ


এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না (১৯৮৩)
পুলিশ করে মানুষ শিকার (১৯৮৭)
রাতের সার্কাস


ছোটগল্প
হালাল ঝাণ্ডা (১৯৮৭)


নবারুন ভট্টাচার্যের ছোটগল্প (১৯৯৬)
নবারুন ভট্টাচার্যের শ্রেষ্ঠ গল্প


ফ্যাতাড়ুর কুম্ভীপাক
ফ্যাতাড়ুর বোম্বাচাক
ফ্যাতাড়ু বিংশতি


উপন্যাস--


হারবার্ট (১৯৯৩)
যুদ্ধ পরিস্থিতি (১৯৯৬),অটো ও ভোগী
ফ্যাতাড়ু ও চোক্তার,কাঙাল মালসাট


মবলগে নভেল,খেলনা নগর,লুব্ধক (২০০৬)


অন্যান্য
জোড়াতালি (২০১৭)


পুরস্কার---
সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৯৩)
বঙ্কিম পুরস্কার
নরসিংহ দাস পুরস্কার


মৃত্যু
নবারুণ ভট্টাচার্য জুলাই ৩১, ২০১৪ সালে আন্ত্রিক ক্যান্সারের কারণে কলকাতায় ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, ৬৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।


Dipak Mitra